আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ॥ ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ ॥ ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেমন ব্যক্তি ছিলেন
অন্যান্য শিরোনাম

হযরত মুহাম্মদ (সা.) কেমন ব্যক্তি ছিলেন

প্রতিনিধি: মাওলানা শামীম আহমেদ (আলোচক বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা)
ডিসে ২০, ২০২৩

মুসলিম মুমিন হৃদয়ের একান্ত আশা, যদি সবকিছুর বিনিময়ে হলেও প্রিয়নবী (দ.)-কে জীবনে একনজর দেখতে পেতাম! যে নবীজিকে (ইমানের চোখে) একবার দেখবেন তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে না (তিরমিজি)। প্রিয় রসুল (সা.)-এর পবিত্র আকার-আকৃতি অনেক সাহাবি থেকে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আলী (রা.) যখনই প্রিয়নবী (সা.)-এর দেহ মোবারকের বর্ণনা দিতেন, তখন বলতেন, নুরনবী (সা.) অত্যধিক লম্বাও ছিলেন না এবং একেবারে বেঁটেও ছিলেন না; বরং তিনি ছিলেন লোকদের মধ্যে মধ্যম আকৃতির। তার মাথা মোবারকে চুল একেবারে কোঁকড়ানো ছিল না এবং সম্পূর্ণ সোজাও ছিল না; বরং মধ্যম ধরনের কোঁকড়ানো ছিল। তিনি অতি স্থূলদেহী ছিলেন না এবং তার চেহারা মোবারক একেবারে গোল ছিল না; বরং লম্বাটে গোল ছিল। গায়ের রং ছিল লাল-সাদা সংমিশ্রিত। চোখ মোবারকের বর্ণ ছিল কালো এবং পলক ছিল লম্বা ও চিকন। হাড়ের জোড়াগুলো ছিল মোটা। পুরো দেহ মোবারক ছিল পশমহীন, অবশ্য পশমের চিকন একটি রেখা বুক মোবারক থেকে নাভি মোবারক পর্যন্ত লম্বা ছিল। দুই হাত এবং দুই পা মোবারকের তালু মোবারক ছিল গোস্ত মোবারকে পরিপূর্ণ।

যখন তিনি হাঁটতেন, তখন পা মোবারক পূর্ণভাবে উঠিয়ে মাটিতে রাখতেন, যেন তিনি কোনো উঁচু জায়গা থেকে নিচের দিকে নামছেন। যখন তিনি কোনোদিকে তাকাতেন, তখন ঘাড় মোবারক পুরোপুরি ঘুরিয়ে তাকাতেন। তার উভয় কাঁধ মোবারকের মাঝখানে ছিল মোহরে নবুওয়াত বা নবী হওয়ার অলৌকিক নিদর্শন। তিনি হলেন সর্বশেষ নবী। তিনি ছিলেন মানুষের মধ্যে অধিক দানশীল, সবচেয়ে বেশি সত্যভাষী। তিনি ছিলেন সবচেয়ে কোমল স্বভাবের এবং বংশের দিক থেকে সম্ভ্রান্ত এবং মর্যাদার অধিকারী। যে ব্যক্তি তাকে হঠাৎ দেখত, সে ভয় পেত (গুরুগম্ভীরতার কারণে)। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি পরিচিত হয়ে তার সঙ্গে মিশত, সে তাকে অনেক ভালোবেসে ফেলত। নবী (সা.)-এর গুণাবলি বর্ণনাকারী এ কথা বলতে বাধ্য হন যে, আমি তার আগে ও পরে তার মতো কাউকে কখনো দেখতে পাইনি (শামায়েলে তিরমিজি)।

হজরত হাসান বিন আলী বলেন, আমার মামা হিন্দ বিন আবু হালা (রা.) কে রসুল (সা.) এর অবয়ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। তিনি নুরনবীর পুরো দেহ মোবারকের বর্ণনা দেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, হুজুর (সা.) এর কপাল মোবারক ছিল বেশ উন্নত। ভ্রু ছিল সরু ও ঘন পাপড়ি বিশিষ্ট। দুই ভ্রু মোবারক আলাদা ছিল। মাঝখানে একটি রগ ছিল। হুজুর (সা.) যখন রাগ হতেন, তখন তা ভেসে উঠত। নাক মোবারক খাঁড়া ছিল। ভালোভাবে না দেখলে মনে হতো তিনি প্রকান্ড নাক বিশিষ্ট। নাক থেকে এক ধরনের নুর চমকাত (শামায়েলে তিরমিজি)।

রসুল (সা.) এর পেট মোবারক সম্পর্কে হিন্দ বিন আবু হালা বলেন, আল বাতনে ওয়াসসাদরি আরিদুন অর্থ পেট ও বুক সমান ছিল (শামায়েলে তিরমিজি)। কেউ কেউ বলছেন, নবীজির দেহ মোবারক সিক্সপ্যাক ছিল। এ বর্ণনা থেকে স্পষ্ট জানা যায়, রসুল (সা.) এর বুক বা পেটের কোনো অংশ সিক্সপ্যাক ছিল না। এ কথা তো সবাই জানে, সিক্সপ্যাক দেহধারীরর বুক এবং পেট কখনো সমান হয় না।

রসুলে করিম (সা.)-এর আকৃতি সম্পর্কে হজরত জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, একবার আমি চাঁদনি রাতে নবী (সা.)কে দেখলাম। অতঃপর একবার রসুলুল্লাহ (সা.)-এর দিকে তাকালাম আর একবার চাঁদের দিকে তাকালাম। তখন তিনি লাল বর্ণের পোশাক পরিহিত অবস্থায় ছিলেন। তাকে আমার কাছে চাঁদের চেয়ে অনেক বেশি সুন্দর মনে হলো (তিরমিজি ও দারেমি)। হজরত কা’ব ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রসুল (সা.) যখন কোনো ব্যাপারে আনন্দিত হতেন, তখন তার চেহারা মোবারক উজ্জ্বল হয়ে উঠত। মনে হতো যেন তার মুখমন্ডল চাঁদের টুকরা (বুখারি ও মুসলিম)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, রসুল (সা.)-এর সম্মুখের দাঁত দুটির মাঝে কিছুটা ফাঁক ছিল। যখন তিনি কথাবার্তা বলতেন, তখন মনে হতো উক্ত দাঁত দুটির মধ্য দিয়ে যেন নুর বিচ্ছুরিত হচ্ছে (দারেমি)।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) এর চেয়ে বেশি সুন্দর কাউকে আমি কখনো দেখিনি। মনে হতো যেন সূর্য তার মুখমন্ডলে ভাসছে। আর রসুল (সা.) অপেক্ষা চলার মধ্যে দ্রুতগতিসম্পন্ন কাউকে দেখিনি। তার চলার সময় মনে হতো মাটি যেন তার জন্য সংকুচিত হয়ে এসেছে। আমরা তার সঙ্গে সঙ্গে চলার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলতাম। অথচ তিনি স্বাভাবিক নিয়মে চলতেন (তিরমিজি)। মহান আল্লাহতায়ালা যেন আমাদের সবাইকে দিদারে রসুলুল্লাহ (সা.) জিয়ারাতে বাইতুল্লাহ নসিব করেন। আমিন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *