আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ॥ ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ ॥ ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

চরাঞ্চলে সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি
গ্রাম বাংলা শিরোনাম

চরাঞ্চলে সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি

প্রতিনিধি: গোলাম কিবরিয়া পলাশ, ময়মনসিংহঃ
ডিসে ৬, ২০২৩

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরানগঞ্জ ও বোররচর ইউনিয়নে এখন যেন হলুদ চাদরে ঢাকা। পরানগঞ্জ ও বোররচর দুইটি ইউনিয়নে এবার সরিষার বাম্পার ফলনে খুশি কৃষকরা। চরাঞ্চলের মাঠে সরিষা ফুলের হলুদ রঙের, ঘ্রান আর মৌমাছির গুঞ্জন আকৃষ্ট করছে প্রকৃতি প্রেমিদেরও।

ফসলের মাঠে খণ্ড খণ্ড হলুদ সরিষা ফুলের সমারোহ, মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ। ফুলে থাকা মধুর লোভে উড়ে বেড়াচ্ছে মৌমাছিরা। ফসলের মাঠে হলুদ সরিষার এমন দৃশ্য দেখা যায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরাঞ্চলের দুইটি ইউনিয়নে। সরিষার বাম্পার ফলনে লাভবান হচ্ছেন কৃষক, হাসি ফুটেছে তাদের মুখে।
এ দৃশ্য মুগ্ধ করবে যেকোন প্রকৃতি প্রেমিকে।

শীতে চরাঞ্চলের দুইটি ইউনিয়নে ফসলের মাঠ জুড়ে দেখা মিললো এমন দৃশ্যের। যতদূর চোখ যায় শুধু হলুদ আর হলুদ। প্রতি বছর এ মৌসুমে হলুদের এমন অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভীড় জমান প্রকৃতিপ্রেমিরা।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জুবায়রা বেগম সাথী সাংবাদিকদের জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ও কৃষি বিভাগের সঠিক পরামর্শে চরাঞ্চলের কৃষকরা সরিষাসহ শীতকালীন সবজি চাষে লাভের মুখ দেখছেন। তিনি বলেন, সবজি ক্ষেতে যাতে ক্ষতিকারক রাসায়নিক সার প্রয়োগ না করেই ফলন বৃদ্ধি করা যায়, সে বিষয়েও সার্বক্ষণিক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে কৃষকদের মাঝে।

তবে, বর্তমানে ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় ১১টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫ হাজার কৃষকদের মাঝে সরিষার বীজ ও সার বিনামুল্যে বিতরণ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন ভোজ্যতেলের জোগান দিতে এবং আমদানি নির্ভরশীলতা কমাতে এসব সরিষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

মাঠ পর্যায়ে সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা প্রতিদিন কৃষকদের সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকে এবং বিভিন্ন প্রকল্প থেকে আমাদের কাছে যে ধরনের সহযোগিতা আসে তা আমরা কৃষকদের মাঝে বিতরণ করে থাকি।

পরানগঞ্জ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু হানিফ সরকার বলেন সরিষার বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষা চাষ করতে আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছি। পাশাপাশি বিনামূল্যে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন জাতের সরিষা বীজ ও সার কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও আমরা কৃষকদের পরামর্শসহ সব ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে যাচ্ছি।

বোররচর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ আশরাফুল আলম সাব্বির সাংবাদিকদের জানান সরিষাসহ নানা জাতের শীতকালীন সবজি চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠছেন স্থানীয় কৃষকেরা। চরাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার উৎপাদিত লাল শাক, ফুলকপি, বাঁধাকপি, বেগুন, কাচা মরিচ তুলতে কৃষক কৃষাণিরা ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

এরই মধ্যে বিভিন্ন বাজারে উঠতে শুরু করেছে সবজি। এতে দাম সাধারণ জনগণের সাধ্যের মধ্যে চলে এসেছে। চরাঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হচ্ছে। এতে স্থানীয় কৃষকরা দেখছেন লাভের মুখ।

৭০ থেকে ৭৫ দিনের মধ্যে সরিষার ফলন হয়। পরে আবার এ জমিতেই বোরো ধানের আবাদ করা হয়। বাড়তি ফসল হিসেবে সরিষার আবাদে বাম্পার ফলনে চাষীরা লাভবান হয়। এ ফসলের টাকা দিয়ে বোরো আবাদের খরচ হয়ে যায় বলে কয়েকজন কৃষক জানায়।

সদর উপজেলার পরানগঞ্জ ইউনিয়নের কৃষক ৩ বিঘা জমিতে সরিষার আবাদ করেছেন কৃষক সবিকুল ইসলাম তিনি বলেন, আগে ধান কাটার পর জমি ফেলে রাখতাম। এখন ফেলে না রেখে সরিষার চাষ করছি। এতে বাড়তি আয় হচ্ছে। সরিষা বিক্রির টাকা দিয়ে চলতি মৌসুমে ধান আবাদ করব। আরেক কৃষক রফিকুল বলেন, সরিষা চাষে খরচ কম।

অন্য ফসলের তুলনায় ফলনও ভালো হয়। অন্য সময়ে সরিষা ঘরে তোলা যায়। সরিষা চাষে আমি বেশ লাভবান হয়েছি। বাজারে বর্তমানে প্রতি মণ সরিষার মূল্য তিন হাজার থেকে সারে তিন হাজার টাকা। বাড়তি ফসল হিসাবে সরিষা আবাদে আগ্রহ বাড়ছে চরাঞ্চলের কৃষকদের। ময়মনসিংহ সদর উপজেলা চরাঞ্চলের দূইটি ইউনিয়নে সরিষার মোট আনুমানিক আবাদ হয়েছে দুই হাজার হেক্টর জমিতে, চাষ হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *