আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ॥ ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ ॥ ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

কেন্দুয়ায় সুদের টাকা আদায়ে অভিনব কৌশল হুমকি ও স্কুল ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি
অন্যান্য প্রধান খবর

কেন্দুয়ায় সুদের টাকা আদায়ে অভিনব কৌশল হুমকি ও স্কুল ছাত্রী হাসপাতালে ভর্তি

প্রতিনিধি: আতিক- কেন্দুয়া,নেত্রকোনা
মে ৭, ২০২৪

আতিক- কেন্দুয়া,নেত্রকোনা প্রতিনিধি :-

নেত্রকোনার কেন্দুয়া উপজেলার সোমবার বিকাল ০৪ ঘটিকায় সময় কেন্দুয়া পৌর শহরের শান্তিবাগের বাসিন্দা ও এক সময়ের চিরাং মোড়ের বিশিষ্ট পার্টস ব্যবসায়ী বিজন কুমার এস এর নিকট হতে সুদের টাকা আদায়ে অভিনব কৌশল অবলম্বন করেন-গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও পৌর শহরের ল্যাবরেটরী স্কুলের পরিচালক মো: হারুন অর রশিদ ও তার পরিবারবর্গ।

ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল কেন্দুয়া জয়হরি স্পাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় তলায়। মোঃ হারুন অর রশিদের মেয়ে কর্তৃক বিজন কুমার এস এর মেয়ে পূজা রাণী এস (১২) মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দু’দিন যাবত উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

বুধবার ১ মে দুপুরে সরেজমিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুটিকে দেখতে যান কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ আব্দুল ওয়াহাব, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ রফিকুল ইসলাম ও অন্যান্য সাংবাদিকবৃন্দ। কথা হয় পূজা রাণী এস ও তাঁর মা সুইটি রাণী এস এর সাথে । ভিকটিমের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চাইলে পূজা রাণী বলেন, হারুন মাস্টারের মেয়ে আমাদের স্কুলেই অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে সে তখন আমাকে কাছে পেয়ে যা ইচ্ছে তাই বলে গালিগালাজ করে, এমনকি স্কুলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাইলে কৌশলে দৌঁড়ে নীচে চলে আসি। সে আরও উল্লেখ করে বলে আমার বাবা তোর বাবার কাছে টাকা পায় এ গুলো না দিলে শান্তিতে থাকতে পারবে না বলেও আমাকে হুমকি দেয়। শুধু স্কুলে নয় আমাদের বাসাতেও পরিবারের একেকজন একেকবার গিয়ে অনবরত হুমকি দিয়ে আসে।

এ সময় ভিকটিমের মা সুইটি রাণী এস বলেন, আমার বাচ্চাদের নিয়ে ভীষণ ভয়ভীতিতে দিনাতিপাত করে আসছি। হারুন মাস্টার সুদের টাকার জন্য আমার বাচ্চাদের সাথে যা ইচ্ছে তা ব্যবহার করছে। এক সপ্তাহ আগেও হারুন মাস্টার নিজেই ও তাঁর লোকজন সুদের টাকা আদায়ের নামে আমাদের দোকানে এসে আমার ছেলেকে মারধর করতে থাকলে তখন আশেপাশে লোকজন জড়ো হয়ে আমার ছেলেকে উদ্বার করে। তখন যদি লোকজন জড়ো না হত বা না ফেরাত তাহলে আমার ছেলের মাথায় রড দ্বারা বারী দিয়ে মেরে ফেলত বা আমার ছেলে মারা যেত। তাছাড়াও প্রতিনিয়তই আমার বাসায় তার পরিবারের লোকজন ও বাহিরের লোকজন নিয়ে, মানসিক নির্যাতন, গালিগালাজ, এমনকি প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন।
গত মঙ্গলবার ৩০ এপ্রিল আমার মেয়ে জয়হরি স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী, হারুন মাস্টারের মেয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী তাই স্কুলের দ্বিতীয় তলায় আমার মেয়েকে গালিগালাজ করে ও দ্বিতীয় তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে পেলে দিতে চেয়েছিল এমন ধরনের ভয়ভীতি আতঙ্ককিত বাসায় গেলে অসুস্হ্যতা বোধ করিলে জরুরী কেন্দুয়া হাসহাপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এমন ধরনের নির্যাতন নিপিড়ন থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বা নিরাপত্তার জন্য কেন্দুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ এনামুল হকের কাছে লিখিত অভিযোগ করিলে ওসি সাহেব অভিযোগ গ্রহণ করেননি, অভিযোগ রাখেননি, এমনকি উল্টো বুঝিয়ে আমাকে ফেরত দেয়। এখন আপনারা সাংবাদিক হিসেবে সত্য ঘটনা তুলে ধরবেন। আপনাদের কাছে আমার পরিবারের শেষ আশ্রয়ের স্হান।

এদিকে অভিযুক্ত গড়াডোবা আব্দুল হামিদ উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক ও কেন্দুয়া পৌর শহরের ল্যাবরেটরী স্কুলের পরিচালক-হারুন অর রশিদ বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নই। তবে বিজন কুমার এস এর পরিবারের সাথে আমার ভাল সম্পর্ক ছিল। আমার কাছ থেকে প্রায় একুশ লাখ টাকা নিয়েছিল। কিন্তু সেটা সঠিক সময়ে পরিশোধ না করে তালবাহানা শুরু করেছে।

এসময় হারুন মাস্টারের কথার প্রেক্ষিতে টাকার লেনদেন বিষয়ে ভিকটিমের বাবা বিজন কুমার এস এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, ২০১৭ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত এগার লক্ষ টাকার সুদ সহ মাসিক কিস্তিতে পরিশোধ করি, আর দশ লক্ষ টাকা হারুন মাস্টার আমার সাথে শেয়ারে মবিলের ব্যবসা করিত। বিজন কুমার সবশেষে বলেন, আমি হারুন মাস্টারের নিকট হতে মোট একুশ লক্ষ টাকা আনি, যা প্রতি মাসে চল্লিশ হাজার টাকা করে সুদ সহ পরিশোধ করি, এপর্যন্ত হারুন মাস্টারকে মোট তেত্রিশ লক্ষ ষাট হাজার টাকা দিয়েছি। বর্তমানে আমার শারীরিক অসুস্থতার জন্য হারুন মাস্টারকে কয়েক মাস ধরে টাকা দিতে পারি নাই বলে, আমার পরিবারের উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু করে। কয়েকদিন আগে আমার ছেলেকে দোকানে মারধর করিলে, তাদের এমন ধরনের অত্যাচারের ভয়ে আত্মঙ্কিত হয়ে আমার ছেলেকে ও মেয়েকে তার মামার বাড়ীতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু স্কুল খুলেছে বলে তিন দিন আগে ছেলে মেয়ে আবারও বাসায় এসেছে। বাসায় এসেছে দেখেই দুইদিন আগে আমার মেয়েকে মাস্টারের মেয়ে জয়হরি স্কুলের দ্বিতীয় তলা থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চেয়েছিল, যার কারণে আমার মেয়ে মানসিক ভয়ভীতিতে আক্রান্ত হয়ে দুইদিন যাবত কেন্দুয়া হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।

এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা হিন্দু বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুনিল পোদ্দার তিনি বলেন- আমার সভাপতি সহ সকলেই ভিকটিমকে কেন্দুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দেখতে গিয়েছিলাম, আমরা আগামীকাল সাংগঠনিক আলোচনার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিব।

এসময় কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করিলে তিনি বলেন, আমি এই বিষয় কিছুই জানিনা। এই মূহুর্তে আপনার কাছে শুনতে পেরেছি।

এবিষয়ে কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সৈয়দ আব্দুল ওয়াহাব বলেন, ভিকটিম পূজা রাণী এস মানসিকভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমি গতকাল ৩০ এপ্রিল মঙ্গলবার রাত ১১.৩১ মিনিটে বিষয়টি কেন্দুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ এনামুল হককে জানিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্তও থানার ওসি বিষয়টি আমলে নেননি।

এ বিষয়ে কেন্দুয়া থানা অফিসার ইনচার্জ মোঃ এনামুল হক (পিপিএম-সেবা) বলেন, আমি এ বিষয়ে পরস্পরের কাছে শুনেছি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *