আজ শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ ॥ ৫ আশ্বিন, ১৪৩১ ॥ ১৬ রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬

তথ্য ফাঁস সাজা ৫ বছরের কারাদণ্ড
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিরোনাম

তথ্য ফাঁস সাজা ৫ বছরের কারাদণ্ড

প্রতিনিধি:
অক্টো ৩১, ২০২৩

অনলাইন ডেস্ক

হঠাৎ করেই দেশে নানাভাবে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। এতে নাগরিকদের মাঝে বাড়ছে উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক। অনেকেই ছুটছেন আইটি বিশেষজ্ঞদের কাছে। জানতে চাচ্ছেন তার এনআইডি বা ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত আছে কিনা। এ বিষয়ে দেশের প্রচলিত বা বিশেষ আইনে কী আছে।

এ বিষয়ে ২০১১ সালে প্রণীত তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইনে বলা হয়েছে, ব্যক্তির কোনো ধরনের তথ্য কেউ যদি বেআইনিভাবে প্রকাশ করে তাহলে তা অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি আইনের মাধ্যমে প্রতিকার পাবেন।

ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা বিষয়ে এ সংক্রান্ত আইনে আরও বলা হয়, জনস্বার্থের বিষয় না থাকলে ব্যক্তির কোনো ধরনের তথ্য প্রকাশ করা যাবে না। ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি দণ্ডবিধির বিধান অনুসরণ করে এ সংক্রান্ত অপরাধ অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। এতে আরও বলা হয়, মিথ্যা ও অসত্য তথ্য প্রকাশকারীকে অথদণ্ড ও কারাদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে।

অর্থদণ্ডের অর্থ ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে জরিমানা হিসাবে প্রদান করা হবে। মিথ্যা তথ্য প্রকাশকারী যদি সরকারি কর্মকর্তা হন, তাহলে তার বিরুদ্ধে উল্লিখিত দণ্ড ছাড়াও বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে বলে আইনে বলা হয়। এছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর ১৭, ১৮, ১৯ এবং ২০ ধারায় তথ্য পাচার, চুরি, তথ্যভান্ডারে প্রবেশ, তথ্য ভান্ডারের ক্ষতিসাধন, ক্ষতিসাধনের চেষ্টা, একই অপরাধের পুনরাবৃত্তির অপরাধের শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।

২০১১ সালের তথ্য প্রকাশ (সুরক্ষা প্রদান) আইনের ৯ ধারায় বলা হয়েছে, মিথ্যা জেনেবুঝে বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত না হয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোনো ভিত্তিহীন তথ্য প্রকাশ করা বেআইনি। যে তথ্যের ভিত্তিতে এই আইনের অধীন তদন্ত বা বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তিনি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন বলে গণ্য হবেন।

নাগরিকের গোপনীয় কোনো তথ্য প্রকাশকারী ব্যক্তি এই আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং ওই অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২ বছর, অনধিক ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। তথ্য প্রকাশকারী কোনো সরকারি কর্মকর্তা হলে এবং তিনি কোনো মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে অর্থদণ্ড ছাড়াও বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে। তবে কারাদণ্ড নির্ধারণ করা হলেও অর্থদণ্ডের পরিমাণ অর্থাৎ কত টাকা অর্থদণ্ড করা হবে সে বিষয়ে আইনের কোথাও কোনো উল্লেখ নেই।

আইনের ১০ ধারায় বলা হয়েছে, জনস্বার্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয় এমন তথ্য মিথ্যা জেনে বা তথ্যের সত্যতা সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত না হয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করলে, যে তথ্যের ভিত্তিতে এই আইনের অধীন তদন্ত বা বিচারকার্য পরিচালিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তিনি মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছেন বলে গণ্য হবেন। কোনো তথ্য প্রকাশকারী কোনো মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করলে তিনি এই আইনের অধীন অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবেন এবং ওই অপরাধের জন্য তিনি অন্যূন ২ বছর বা অনধিক ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড বা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে যা বলা হয়েছে : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ১৭(১) ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোতে বেআইনিভাবে প্রবেশ করেন, বেআইনি প্রবেশ করে রক্ষিত তথ্যের ক্ষতিসাধন বা বিনষ্ট বা অকার্যকর করেন অথবা করার চেষ্টা করেন তাহলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কাজ অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। শুধু বেআইনি প্রবেশের অপরাধে সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ২৫ হাজার টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে। আর বেআইনি প্রবেশ করে তথ্যের ক্ষতিসাধনের অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড বা ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। যদি একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হয় তাহলে অপরাধীর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা ৫ কোটি টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

আইনের ১৮(১) ধারায় কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেম, ইত্যাদিতে বেআইনিভাবে প্রবেশের দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে বেআইনি প্রবেশ করেন বা প্রবেশ করতে সহায়তা করেন। অপরাধ সংঘটনের উদ্দেশ্যে বেআইনি প্রবেশ করেন বা প্রবেশ করতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কাজ একটি অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল সিস্টেমে প্রবেশের অপরাধ করলে তিনি সর্বোচ্চ ৬ মাস কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল সিস্টেমে প্রবেশ করে কোনো অপরাধ করলে তিনি সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

যদি কেউ সংরক্ষিত কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হয়, তাহা হইলে তিনি সর্বোচ্চ ৩ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। যদি একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হয়, তাহা হইলে মূল অপরাধের জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত করা আছে, তা দ্বিগুণ করে কারাদণ্ড অথবা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত হবে।

আইনের ১৯ ধারায় কম্পিউটার, (ক)কম্পিউটার সিস্টেম, ইত্যাদির ক্ষতিসাধনের দণ্ডের বিষয়ে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি উল্লিখিত কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি সর্বোচ্চ ৭ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন সংক্রান্ত অপরাধের দণ্ডের বিষয়ে আইনের ২০ ধারায় বলা হয়, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে ব্যবহৃত কম্পিউটার সোর্স কোড গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করেন বা অন্য কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে উক্ত কোড, প্রোগ্রাম, সিস্টেম বা নেটওয়ার্ক গোপন, ধ্বংস বা পরিবর্তন করার চেষ্টা করেন এবং উক্ত সোর্স কোডটি যদি সংরক্ষণযোগ্য বা রক্ষণাবেক্ষণ যোগ্য হয়, তা হলে এ ধরনের কাজ অপরাধ হিসাবে গণ্য হবে। কোনো অপরাধ সংঘটনের অপরাধে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি হলে সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড অথবা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *